ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ ‘মোখা’ কেন?

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ ‘মোখা’ কেন?
শুক্রবার ● ১২ মে ২০২৩


ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ ‘মোখা’ কেন?বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ ১০ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ–পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি দক্ষিণ–পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।

এরআগে, গত বুধবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেছেন, মোখা সুপারসাইক্লোনে রূপ নিতে পারে। এবার এ ঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মোখা’।

‘মোখা’ নামকরণ কীভাবে হলো, কেনই বা ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করতে হয়, এমন প্রশ্ন অনেকের।

কী কারণে নামকরণ
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের ইতিহাস খুব বেশি পুরনো নয়। ২০০৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করতে শুরু করে।

এর কারণ মূলত প্রস্তুতি, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ সংক্রান্ত। নামবিহীন থাকলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি, ধরন সম্পর্কে তথ্য জানতে বেগ পেতে হয়। আগে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলো থেকে এর আঘাত হানার সময় বা তারিখ বের করে পরবর্তী সময়ে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করতে হয় আবহাওয়াবিদদের। এটি বেশ সময়সাপেক্ষ। তাই নাম রাখার প্রচলন। ডব্লিউএমও সে জন্য পাঁচটি বিশেষ আঞ্চলিক আবহাওয়া সংস্থার (আরএসএমসি) সঙ্গে সমন্বয় করে ২০০৪ সাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করেছে। আরএসএমসি তার সদস্যদেশগুলোর কাছ থেকে নামের তালিকা চেয়ে থাকে। তালিকা পেলে দীর্ঘ সময় যাচাই-বাছাই করে সংক্ষিপ্ত তালিকা করে ডব্লিউএমওর কাছে পাঠায়।

বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা অনুমোদন করে আঞ্চলিক কমিটির একটি প্যানেল। তার নাম ডব্লিউএমও/এসকাপ প্যানেল অন ট্রপিক্যাল সাইক্লোনস। এর মধ্যে আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ইরান, কাতার, সৌদি আরব, ইয়েমেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

২০১৮ সালের আরএমএসসি নতুন করে ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা করে। এ সময় ১৩টি দেশ ১৩টি করে নাম দেয়। নামকরণের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মেনে চলা হয়। যেমন রাজনীতি বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ধর্মীয় বিশ্বাস, সংস্কৃতি বা লিঙ্গ নিরপেক্ষ হতে হবে নামগুলোকে। বিশ্বের কোনো অঞ্চলের কোনো মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করে, এমন নাম দেওয়া যাবে না। নাম রূঢ় হতে পারবে না। এটি সংক্ষিপ্ত ও সহজে উচ্চারণ করা যায়, এমন হতে হবে।

সর্বোচ্চ আটটি বর্ণ থাকতে হবে ওই নামে। নাম দেওয়ার পাশাপাশি এখানে উচ্চারণও দিয়ে দিতে হবে। সদস্যদেশগুলোর দেওয়া প্রস্তাবিত নাম সময়ে সময়ে সংশোধন করা যাবে।

সদস্যরাষ্ট্রগুলোর ইংরেজি নামের আদ্যক্ষর অনুযায়ী নামের তালিকা হয়। যেমন ইংরেজি বর্ণমালা অনুযায়ী এই ১৩ দেশের মধ্যে সবচেয়ে আগে থাকে বাংলাদেশের নাম। আর শেষে থাকে ইয়েমেনের নাম। এবার মোখা শব্দটি ইয়েমেন থেকে নেওয়া হয়েছে। এরপরই আসবে বাংলাদেশের দেওয়া নাম।

‘মোখা’ নাম কীভাবে
মোখা ইয়েমেনের একটি বন্দর শহরের নাম। ইয়েমেনের লোহিত সাগর উপকূলের শহর এটি। ঊনবিংশ শতকে ইয়েমেনের প্রধান বন্দরে পরিণত হয় মোখা। শহরটি কফির বাণিজ্যের জন্য সুপরিচিত। মোখা নামে একটি কফিরও নাম আছে। সেই পঞ্চদশ শতক থেকে কফির বড় বাজার ছিল মোখা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:০২:০০ ● ২৭২ বার পঠিত




আর্কাইভ