যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত ভিসানীতি নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে খুব আলোচনা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এটি ছিল ‘টক অব দ্য সেক্রেটারিয়েট’। মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুশিয়ারিতে উচ্চপদস্থ কিছু কর্মকর্তার চোখে-মুখে উদ্বেগের ছাপ রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, এতে করে একটি ভালো নির্বাচনের পরিবেশ পাওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কর্মকর্তাদের অনেকে বিশ্বস্ত ব্যাচমেট ও বন্ধুদের কক্ষে ডেকে নিয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন— জানার চেষ্টা করেছেন কী হতে যাচ্ছে। বিশেষ করে মাঠ প্রশাসনে যারা কাজ করছেন ও ভবিষ্যতে নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের কেউ কেউ সিনিয়রদের কাছে নানাভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ চাইছেন।
অনেক কর্মকর্তার সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেন এবং সেখানে যাদের সহায়-সম্পদ ও যাতায়াত রয়েছে, এমন কর্মকর্তাই ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুশিয়ারিতে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত। তবে প্রশাসনের নিম্ন ও মধ্যস্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে এ নিয়ে তেমন আলোচনা নেই। এ দুই স্তরের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুশিয়ারিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, গুটিকয়েক দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেশের নির্বাচনব্যবস্থাকে পঙ্গু করেছেন।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ভিসানীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করব না। এটা দুটি রাষ্ট্রের ব্যাপার।’ যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা নির্বাচনের জন্য সহায়ক হবে কিনা, এমন এক প্রশ্নেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
তবে বিষয়টিকে পাত্তা দিতে নারাজ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সরকারের অতিরিক্ত সচিব এসএম আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা নিয়ে চিন্তার কারণ দেখি না। কারণ নির্বাচনের তফসিল হওয়ার পরই নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব দপ্তর নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে যায়। তখন নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে শতভাগ সততার সঙ্গে কাজ করি। প্রধানমন্ত্রী, ইসি, জাতিসংঘসহ যুক্তরাষ্ট্রও চায় সুষ্ঠু নির্বাচন। আমরাও চাই সুষ্ঠু নির্বাচন। তা হলে চিন্তার কোনো কারণ দেখি না।’
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। পুলিশ বাহিনীর কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করলেও অনেকে আবার সরকারের সিদ্ধান্তকেই তাদের মতামত হিসেবে ব্যক্ত করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন উপপুলিশ কমিশনার বলেন, ‘আসলে আমরা রাষ্ট্রের দেওয়া দায়িত্ব পালন করি। রাষ্ট্র পরিচালনা করে সরকার। সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবেন, সেভাবেই দায়িত্ব পালন করব। এখানে আমাদের ব্যক্তিগত কোনো সুবিধা বা অসুবিধা নেই।’
জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র মো. মনজুর রহমান বলেন, নির্বাচনকালীন পুলিশ নির্বাচন কমিশনের আওতায় থাকে। সেখান থেকে সেভাবে পরিচালনা করা হবে। পুলিশ তার দায়িত্ব সেভাবেই পালন করবে।