এনপি না আসায় শুরুতেই অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হয়ে পড়ে সিলেট সিটি নির্বাচন। এরপর প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিয়ে প্রচারণার মাঝপাথে সড়ে দাঁড়ান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী। ফলে আরো জৌলুস হারায় নির্বাচন। এতে নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়।
এরমধ্যে গত কয়েকদিন ধরেই সিলেটে চলছে মুষলধারে বৃষ্টি। দেখা দিয়েছে বন্যার শঙ্কাও। অনেক ভোটকেন্দ্রেও পানি জমেছে। বিএনপিসহ কয়েকটি দলের বর্জন আর বৈরি আবহাওয়া- এই দুয়ে মিলে এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটারদের আনাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
বৃষ্টির কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে বলে ধারণা করছেন সিলে সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের। তিনি মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, বৃষ্টির কারণে ভোটে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। বৃষ্টির মধ্যে ভোটার কেমন আসবেন এখনই বলা যাচ্ছে না। আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলে ভোটারেরা আসবেন। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসবেন।
তিনি বলেন, ভোটের জন্য সব কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। চার-পাঁচটা কেন্দ্রের মাঠে পানি উঠেছে। ওসব কেন্দ্রে পানি নিষ্কাশনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আগের কয়েকদিনের তুলনায় মঙ্গলবার বৃষ্টি কিছুটা কমলেও দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন জানিয়েছেন, বুধবারও বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। দিনভর মুষলধারে বষ্টি হতে পারে।
বুধবার পঞ্চমবারের মতো সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনের মোট ভোটার ১৯০টি। আর ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এবারই প্রথমবারের মতো সিলেটে ইভিএমে মোট হচ্ছে। আর নগরের নতুন ১৫ টি ওয়ার্ডেও এবার প্রথম নির্বাচন। নতুন ওয়ার্ডগুলো মিলিয়ে এবার ওয়ার্ড সংখ্যা ৪২টি। এবার ভোটার বেড়ে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার। সর্বশেষ ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে ভোট পড়েছিলো ৬২ শতাংশ।
এই নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপিসহ তাদের সমমনা ও বামদলগুলো। ফলে নির্বাচনে অংশ নেননি বিএনপি নেতা ও বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ভোটের মাঠে আরিফের অনুপস্থিতিতে নির্বাচনী আমেজ অনেকটাই মিইয়ে আসে। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগের মতো উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়নি এবার।
তবে মেয়র পদে বিএনপি অংশ না নিলেও বিএনপির অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মী বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া নিবন্ধন হারানো জামায়াত সমর্থিত অন্তত ২০ কাউন্সিলর প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। ফলে তাদের সমর্থিত দলীয় ভোটাররা কেন্দ্রে আসতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবার নগরের ৪২টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৭৩ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৮৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সিলেট মহানগর বিএনপি সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, এই নির্বাচন আমরা বর্জন করেছি। ফলে এ নিয়ে আমাদের কোন আগ্রহ নেই। আমাদের যারা প্রার্থী হয়েছিলেন দল তাদের বহিস্কার করেছে। ফলে তাদের সাথে বিএনপির কোন সম্পর্ক নেই।
এই নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৮ জন। তবে বরিশাল সিটি নির্বাচনের ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষিতে গত ১২ জুন সিলেটে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ফলে প্রচারের মাঝপথে সড়ে দাঁড়িয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাহমুদুর রহমান। মাঠে থাকলে যিনি মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেন বলে ধারণা করছিলো।
সিলেটে অন্য ৭ মেয়র প্রার্থী হলেন- আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল, জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শাহজাহান মিয়া, আব্দুল হানিফ কুটু, মোশতাক আহমদ রউফ মোস্তফা ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ছালাহ উদ্দিন রিমন।
এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুলের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, আ্ওয়ামী লীগের প্রার্থী বাইরে থেকে লোকজন এনে সিলেটে একটি আতংকের পরিবেশ তৈরি করেছেন। আমার এজেন্টদের তারা ফোন করে হুমকি দিচ্ছেন। মনে হচ্ছে তারা একটি যুদ্ধে নেমেছেন। এ অবস্থতা আমরা ভোটাররা আতংকিত। তাছাড়া প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। অনেক কেন্দ্রে পানি। এ অবস্থায় মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবে কিভাবে।
তবে সব বৈরিতা উপেক্ষা করে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিরাট একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ অবস্থায় জনগনই আমার একমাত্র শক্তি। জনগন দলে দলে কেন্দ্রে এসে ভোটের মাধ্যমে এই ষড়যন্ত্রের জবাব দিতে পারেন।
ভোটারদের কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামানও। ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা কেন্দ্রে আসুন। আপনাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিন। তাতে আমি পরাজিত হলেও আপত্তি নেই। তবু আপনারা ভোটদিন।
বৈরি আবহাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, সিলেটে সবসময়ই বৃষ্টি হয়। এই আবহাওয়ার সাথে এখানকার লোকজন পরিচিত। ফলে এতে তেমন সমস্যা হবে বলে আমার মনে হয় না।
বাবুলের অভিযোগ প্রসঙ্গে আনোয়ারুজ্জামান বলেন, তিনি সম্ভবত বুঝে গেছেন তিনি পিছিয়ে আছেন। তাই এসব অভিযোগ করছেন।