শেখ হাসিনা দুর্বল হলে ক্ষতি সবার, ওয়াশিংটনকে দিল্লির বার্তা

প্রথম পাতা » অনুসন্ধানী প্রতিবেদন » শেখ হাসিনা দুর্বল হলে ক্ষতি সবার, ওয়াশিংটনকে দিল্লির বার্তা
শুক্রবার ● ১৮ আগস্ট ২০২৩


আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন

বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে বরাবরই বিদেশিদের রাজনৈতিক তৎপরতা লক্ষ করা যায়। প্রতিবারের মতো এবারও তৎপর হয়েছেন বিদেশি কূটনীতিকরা। ঘন ঘন ঢাকা সফরে আসছেন যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার দূতরা।

বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের বাড়তি কর্মকাণ্ড লক্ষণীয়। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সরকার ও বিরোধী পক্ষসহ সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন।

ওয়াশিংটন ইতোমধ্যে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতিও প্রণয়ন করেছে।

তারা জানিয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দল, সংগঠন, সংস্থা বা কোনো ব্যক্তি যদি নির্বাচন ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ’ করার ক্ষেত্রে বাধা হয়, তাহলে এই ভিসানীতির আওতায় তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।

একেবারে ‘স্পষ্ট’ করে না বললেও মার্কিন দূতদের অনেক বক্তব্য-বিবৃতি আকারে-ইঙ্গিতে বর্তমান সরকারের ওপর চাপ ফেলার জন্য বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভূমিকায় খুশি নয় প্রতিবেশী ভারত।

তারা মনে করে, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দুর্বল হলে তা ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র কারও জন্যই সুখকর হবে না। নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, নয়াদিল্লি তাদের এ মত একাধিক স্তরের বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছে বাইডেন প্রশাসনকে।

শুক্রবার প্রকাশিত ‘হাসিনাকে দুর্বল করলে ক্ষতি সবার, বার্তা আমেরিকাকে’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নয়াদিল্লির বক্তব্য, ঢাকায় সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হোক এটা ওয়াশিংটনের মতো ভারতও চায়। কিন্তু যেভাবে হাসিনার সরকারকে অস্থির করার জন্য আমেরিকার তরফ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে, তা প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ইতিবাচক নয়।’

‘আর তিন সপ্তাহ পরেই নয়াদিল্লিতে এক মঞ্চে বসবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগে ভারতের এই বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। সাউথ ব্লক মনে করে, জামায়াতে ইসলামীকে ‘রাজনৈতিক ছাড়’ দেয়া হলে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা মৌলবাদের দখলে চলে যাবে। উদার পরিবেশ যেটুকু রয়েছে, তাও আর থাকবে না।’

কূটনৈতিক মহলের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়ার পরই গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত অঞ্চল বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে। তালেবান এখন আফগানিস্তানের ক্ষমতার শীর্ষে। মনে করা হচ্ছে, আফগানিস্তানের নারী, শিশু এবং সংখ্যালঘুদের কথা বিবেচনা না করেই আমেরিকা আফগানিস্তান নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে চুক্তি করে নিয়েছিল, এখন যার ফল ভুগতে হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে, কাবুলের পাশাপাশি ভারতের অন্য প্রতিবেশী সম্পর্কে আমেরিকার নীতিও নয়াদিল্লির জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে অস্বস্তি বাড়াচ্ছে। ভারতের সঙ্গে দীর্ঘতম স্থলসীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশের। ফলে সে দেশের যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি ভারতেও প্রভাব ফেলে।

নয়াদিল্লি এ কথাই বাইডেন প্রশাসনকে জানিয়েছে যে, জামায়াতকে আশকারা দিলে একদিকে যেমন ভারতের আন্তসীমান্ত সন্ত্রাস বাড়তে পারে, তেমনই চীনের প্রভাব বাংলাদেশে অনেকটাই বেড়ে যাবে, যা কাঙ্ক্ষিত নয় ওয়াশিংটনেরও। মনে করা হচ্ছে, আমেরিকা জামায়াতকে বরাবর রাজনৈতিক ইসলামিক সংগঠন হিসেবেই দেখানোর চেষ্টা করে। মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে তাকে তুলনা করে আমেরিকা। কিন্তু বাস্তবে জামায়াত যে উগ্র মৌলবাদী সংগঠন এবং পাকিস্তানের হাতে তামাক খায়, এ বিষয়ে নিঃসন্দেহ নয়াদিল্লি।

কেবল বাংলাদেশের জন্য বাইডেন প্রশাসনের আলাদা ভিসানীতি ঘোষণা আদৌ উচিত বলে মনে করছে না নয়াদিল্লি। এই ভিসানীতির ফলে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন যারা বানচাল করার চেষ্টা করবে, তারা আমেরিকায় প্রবেশের অধিকার পাবে না।

প্রতিবেদন অনুসারে, কূটনৈতিক শিবির মনে করছে, আমেরিকার প্রশাসন সরাসরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলাতেই নিজের দেশের আইন প্রয়োগ করে সে দেশের জন্য পৃথক ভিসানীতি গ্রহণ করল।

সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নয়াদিল্লি সফরে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব তথা কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সেখানে প্রতিনিধিদলও বার্তা দিয়েছে, আঞ্চলিক স্থিতি বজায় রাখার প্রশ্নে বিএনপি-জামায়াত জোট বিপজ্জনক।

প্রতিনিধিদলের নেতা বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে একটি ইতিবাচক বৈঠক সেরেছেন। ওই বৈঠকের ঠিক পরেই তার বক্তব্য, ‘আমরা ভারতকে এটাই বলেছি যে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা উভয় রাষ্ট্রের জন্যই জরুরি। হাসিনা সরকার এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে বাংলাদেশের মাটিকে ভারতবিরোধী কার্যকলাপে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।’ তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫২:৩৭ ● ৪২৫ বার পঠিত




আর্কাইভ