।।এম এ মোহিত।।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল রহিম শহীদ। সিআইপি এমএ রহিম নামেই সবার কাছে অধিক পরিচিত তিনি। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের স্থানীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রুহী প্রার্থী হয়ে ৩০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র দাখিল করেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটানিং অফিসারের কাছে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন,মৌলভীবাজার সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আকরব আলী, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ কামাল হোসেন, রাজনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ৮নং মনসুরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিলন বখত, মনসুরনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ফরজান মিয়াসহ অনেকে।
তবে তার দাখিলকৃত মনোনয়নপত্রের হলফনামায় সমর্থক ভোটার তালিকায় ছিল মৃত ব্যক্তির জাল স্বাক্ষর থাকা, দ্বৈত নাগরিক, কর ফাঁকি তথ্যগোপনসহ সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন অভিযোগ থাকার কারণে ৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই কালে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং অফিসার উর্মি বিনতে সালাম তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিপুল সম্পদের মালিক এমএ রহিম শহীদ যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক, তারপরও তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রুহী প্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন যা বাতিল করা হয়েছে। এম এ রহিম শহীদ বিগত ৯ বছর যাবৎ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের কর পরিশোধ করছেন না তাই বকেয়া কর পড়ে আছে তার ঘাঁড়ে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এমএ রহিম শহীদ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা। স্থায়ী নাগরিকত্ব নিয়ে ব্রিটেনে বসবাস করেন দীর্ঘসময় যাবৎ। নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন লন্ডন বাংলা এগ্রো ও এমআর এগ্রো ট্রেডিং লিমিটেড নামে শিল্প প্রতিষ্ঠান। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে ৯ বছরে ১৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা আয় করেছেন এম এ রহিম শহীদ। কিন্তু বিগত ৯ বছর যাবৎ এসব প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক কর প্রদান করছেন না। যার কারণে নাজিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ ১৯ নভেম্বর ২০২৩-২৪/৭১ (৫) স্মারকে মোট ৯ বছরের বকেয়া পাওনা এক কোটি ৩৬ লাখ ৮ হাজার টাকা পরিশোধের জন্য (তাগদাপত্র) চিঠি পাঠিয়েছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, এটা হচ্ছে হোল্ডিং কর। ইউনিয়ন পরিষদ আইন অনুযায়ী, আয়ের সাত শতাংশ কর দিতে হয়। তার প্রতিষ্ঠান ৯ বছর যাবৎ কর ফাঁকি দিয়ে আসছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের আইনসভার পরিচ্ছেদ ১ এর ৬৬ এর ২- এ বলা হয়েছে, বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিক হলে কেউ সংসদ সদস্য প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন। তবুও আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করে এমএ রহিম শহীদ এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩(সদর-রাজনগর) আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রুহী প্রার্থী হয়েছেন। ১৯৮২ সালে এমএ রহিম শহীদ ব্রিটেনে পাড়ি জমান। সেখানে শুরু করেন ব্যবসা। সেই সময় থেকে তিনি ব্রিটেনের স্থায়ী নাগরিক। তার স্ত্রী ও সন্তান সবাই ব্রিটেনে বসবাস করেন। ব্রিটেনের স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে ১৯৯০ সালে সেন্ট পিটার ওয়ার্ডে কাউন্সিলরও নির্বাচিত হন। এরপর দেশে এসে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন। মৌলভীবাজার শহরের সবুজবাগ এলাকায় এমআর টাওয়ার ১ ও শ্রীমঙ্গল সড়কে এমআর টাওয়ার-২ নামে দুটি ভবন রয়েছে তার। এমআর টাওয়ার-২ এর পাশে রয়েছে নিজের বসবাসের আলিশান বাড়ি। এমএ রহিমের নামে ব্রিটেনে একাধিক কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি এমআর ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, মাহি মানি ট্রান্সফার অ্যান্ড ট্রাভেলস লিমিটেড, মাহি প্রপার্টিজ (ইউকে) লিমিটেডের ডিরেক্টর। ২০২০ সালে লন্ডনের শ্রম আদালতে ডিডব্লিউ ইরাসমাসের করা মামলায় (মামলা নাম্বার: ১৬০১১৫৫/১৮ জরিমানার সাজাপ্রাপ্ত হন এমএ রহিম শহীদ।
এ বিষয়ে এমএ রহিম শহীদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কর ফাঁকির তথ্যটি সঠিক নয়। দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ দ্বৈত নাগরিক হয়েও তিনি এর আগেও দুইবার নির্বাচন করেছেন’।