বুধবার ● ১০ মে ২০২৩

নদীকে খাল দেখিয়ে প্রকল্প, ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে

প্রথম পাতা » অনিয়ম-দুর্নীতি » নদীকে খাল দেখিয়ে প্রকল্প, ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে
বুধবার ● ১০ মে ২০২৩


হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে এরাবরাক নদীকে খাল হিসেবে দেখিয়ে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) খনন প্রকল্প থেকে ৫০ লাখ টাকা গায়েবের অভিযোগ ওঠেছে। এর মধ্যে ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

এলজিইডি উপজেলার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ও মৌলভীবাজারের খলিলপুরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া এরাবরাক নদী। এটিকে খাল হিসেবে দেখিয়ে সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০ ফুট প্রস্থে প্রায় ছয় কিলোমিটার পুনঃখনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প (জাইকা-২)। প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করেছে এরাবরাক খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড।

অভিযোগ থেকে জানা গেছে, জাইকা প্রকল্পের কাজ করার জন্য এরাবরাক খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড গঠন করে সেই সময়ের সভাপতি এম এ শাহেদ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মছদ্দর আলী ও কোষাধ্যক্ষ শফিউল আলম হেলাল আউশকান্দি রুপালী ব্যাংকে একটি যৌথ হিসাব খোলেন। ওই হিসাব থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা গায়েবের অভিযোগ উঠেছে সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে।

ওই ঘটনায় সমিতির কার্যকরী কমিটির সাবেক সহসভাপতি আশিক মিয়া, সদস্য মতচ্ছির হোসেন খান, সিরাজ মিয়া, ও মুজিবুর রহমান শামসুল হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। জেলা প্রশাসক এ নিয়ে সরেজমিনে তদন্তের জন্য নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নির্দেশ দেন। ইউএনও ইমরান শাহরীয়ার ও নবীগঞ্জ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ইসমাইল তালুকদার সরেজমিনে তদন্ত করেন। এ সময় সমিতির কমিটি ভেঙে তারা নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন বলে তদন্ত কমিটি জানিয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সমিতির সাবেক সভাপতি ও সম্পাদক লেবার কন্ট্রাকটিং সোসাইটির (এলসিএস) টাকা শ্রমিকদের মধ্যে বণ্টন না করে আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া সাবেক সভাপতি শাহেদ সদস্যদের সঞ্চয়ের টাকা নিজের কাছে রেখে মনগড়াভাবে সমিতি পরিচালনা করে গেছেন। ব্যবস্থাপনা কমিটির ১২ জন সদস্য থাকা সত্ত্বেও সাবেক সভাপতি বিনা নোটিশে নিজস্ব লোকজনের সই নিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করেছেন। সমিতির মজুত করা ৭৮ হাজার ২৮৯ টাকা সভাপতি নিজের কাছে রেখে দেন। যা অনিয়মের শামিল এবং সমিতির আইন পরিপন্থী।

তদন্ত প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে, ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের (জাইকা-২) অধীনে এরাবরাক উপ-প্রকল্পে এরাবরাক খাল পুনঃখনন কাজের জন্য বরাদ্দ করা ৩১টি এলসিএসের মধ্যে ১৩,১৪, ১৫ ও ১৬ নম্বর বিলের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এসব বিলে মোট ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার ৭৬৪ টাকা শ্রমিকদের পরিশোধ করার শর্তে চেকে সমিতির নিজেদের পছন্দের সদস্যদের সই নেন সাবেক সভাপতি শাহেদ ও সম্পাদক মছদ্দর। ওই টাকা ব্যাংক থেকে তুলে শ্রমিকদের মধ্যে বণ্টন না করে তারা আত্মসাৎ করেন।

এ বিষয়ে এরাবরাক খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাবেক সভাপতি কাজী এম এ শাহেদ মিয়া বলেন, ‘কোনো টাকা আত্মসাৎ করি নাই। তিনজনের নামে ব্যাংক হিসাব, আমরা সবাই মিলে টাকা তুলেছি। আমরা সমবায় কর্মকর্তাকে ঘুষ দেই নাই, তাই তিনি এমন প্রতিবেদন দিয়েছেন। আমি এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি।’

৫০ লাখ টাকা ব্যাংক হিসাব থেকে গায়েব হয়েছে দাবি করে সমিতির সাবেক সহসভাপতি আশিক মিয়া বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত কমিটি ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে। আমরা সমিতির টাকা ফেরত চাই। পুরো সমিতির কয়েক কোটি টাকার প্রকল্প নয়ছয় করা হয়েছে।’

নবীগঞ্জ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ইসমাইল তালুকদার বলেন, ‘আমি বাদী-বিবাদী উভয়ের সঙ্গে কথা বলি এবং সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নিয়ে সরেজমিনে তদন্ত প্রতিবেদন করি। তদন্তের সময় সমিতির সাবেক সভাপতি শাহেদ আমাকে তার পক্ষে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য হুমকি দেন। আমরা টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়ে সমিতির কমিটি ভেঙে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরিয়ার বলেন, ‘জাইকা প্রকল্পের ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার ৭৬৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। আমি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। তিনি পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।’

নদীকে খাল হিসেবে দেখানোর বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘এরাবরাক নদীকে খালে হিসেবে দেখিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা ন্যক্কারজনক। ব্যক্তি স্বার্থের জন্য পুরো নদীর এমন ক্ষতি মেনে নেওয়া যায় না। এটা রীতিমতো নদীর প্রতি নির্যাতন করা হচ্ছে।’

বাংলাদেশ সময়: ২১:৫৮:১৮ ● ২৫৯ বার পঠিত